জলবায়ু পরিবর্তন প্রজন্ম ও তরুণদের মানবাধিকারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এর ফলে তরুণ প্রজন্মের জীবন, জীবিকা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক অর্থনৈতিক দিকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে এ সংকট নিরসনে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সাথে জলবায়ু আলোচনায় তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ওয়েবিনার ‘ক্লাইমেট জাস্টিস: ক্যাপচারিং ইয়ুথ ভয়েস ফ্রম গ্লোবাল সাউথ ইন দ্যা কনটেক্স অব প্যানডেমিক’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে গত বৃহস্পতিবার এসব মন্তব্য করেন বক্তারা। বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপ থেকে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন: দ. কোরিয়ার সহায়তা চায় বাংলাদেশ
বক্তারা বলেন, জলবায়ু আলোচনায় তরুণদের অংশগ্রহণ ও মতামত জরুরি হলেও করোনা মহামারির প্রভাবে এবং যথাযথ পলিসি ও অ্যাডভোকেসির অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কণ্ঠরোধ হচ্ছে। এমনকি আসন্ন কপ২৬ সম্মেলনেও বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। জলবায়ু সংকট নিরসনে যারা বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমরা তাদের কাছে আশা করব যেন তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহনকে উৎসাহিত করা হয় যাতে আমাদের বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের তরুণরা তাদের সিদ্ধান্ত ও উদ্বেগের কথা বিশ্বব্যাপী চলমান জলবায়ু সংকট নিরসন আলোচনায় তুলে ধরতে পারেন।
শুরুতে ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা এবং একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ পরিষদ এর সদস্য রেবেকা সুলতানা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু বিষয়ে আইনগত কাঠামো রয়েছে। আমাদের এটা মানতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন একটি মানবসৃষ্ট পরিস্থিতি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখন ঝুঁকির মুখে যার জন্য দায়ী আমরাই। প্যারিস চুক্তি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের তরুণদের কণ্ঠ অবশ্যই শুনতে হবে যাতে তাদের চিন্তাগুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে পৌঁছে দেওয়া যায়।’
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব
এসময় তিনি তরুণদের জলবায়ু বিষয়ে সচেতন হওয়ার ও সকলকে সচেতন করার জন্য আহ্বান জানান।
অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর (আইসিসিসিএডি) পরিচালক ও বাংলাদেশি জলবায়ু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সালিমুল হক বলেন, ‘জলবায়ু সমস্যা সমাধানে অ্যাডভোকেসির চেয়ে বেশি জরুরি সরাসরি কাজ করা ও উদ্যোগী হওয়া। কপ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা না থাকা জলবায়ু সংকট নিরসনে তেমন প্রভাব ফেলবে না। আপনার এলাকার একটি সমস্যা বেছে নিন এবং মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করুন, সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু করে দিন আজই।’
প্রথমে স্থানীয়ভাবে শুরু করে পরে জাতীয়ভাবে এমনকি বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম শুরু করা উচিত বলেও জানান এই বিজ্ঞানী।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বিশ্বব্যাপী তরুণরা তাদের সমস্যা ও চিন্তার কথা বিশ্বনেতাদের কাছে তুলে ধরতে চায় মূলত কপ২৬ প্লাটফর্মের মাধ্যমে। তবে এ বছর করোনা ভাইরাসের টিকার প্রশ্নে কপ২৬ সম্মেলন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যকে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশে চায় ঢাকা
এ সময় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের সমগ্র জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিক জনসংখ্যার অধিকাংশ যারা টিকা দেয়নি তারা তরুণ। বয়স এবং অন্যান্য অনেক বাঁধার কারণে এটি হয়নি যা দুঃখজনক। যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং বর্তমান তরুণদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত সে সম্মেলন কতটুকু অর্থবহ হবে তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। একই সাথে তিনি কপ প্রেসিডেন্সি ও বিশ্ব নেতাদের কাছে এ বার্তা পাঠানোর জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ ও সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
জলবায়ু কর্মী শ্রেয়া কে. সি (নেপাল), দিশা রেবি (ভারত), এরিক ড্যামিয়েন (কেনিয়া), নীশাদ শফি (কাতার), জন বোনিফাসিও (ফিলিপাইন), ম্যানুয়েল ভাস্কুয়েজ (গুয়াতেমালা), মারিয়া রেইস (মেক্সিকো), লাক্স শর্মা (ভারত), খূন টেট প্যাঙ্গ (মায়ানমার), জোয়ান্ত বাবিরিয়া (উগান্ডা) ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জলবায়ু কর্মী ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি তাদের চিন্তাভাবনা এবং অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।